আবুল হাসান ( জন্ম: ১৯৪৭, ৪ আগস্ট-মৃত্যুঃ ১৯৭৫, ২৬ নভেম্বর ) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি ও সাংবাদিক। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া, আর সাহিত্যক নাম আবুল হাসান। তিনি ষাট দশকের জনপ্রিয় কবিদের একজন এবং সত্তুর দশকেও জনপ্রিয় ছিলেন।
আবুল হাসান এর লিখা আমার কিছু প্রিয় কবিতা, শেয়ার করলাম হয়ত আপনাদের ভাল লাগবে।
অপরিচিতি
যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!
স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত
আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!
প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী
অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে
অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে
যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ
যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন
কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
আকাঙ্খা
তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।
তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।
তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।
তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।
প্রশ্ন
চোখ ভরে যে দেখতে চাও
রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?
বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও
জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?
এত যে কাছে আসতে চাও
কতটুকু সংযম আছে তোমার?
এত যে ভালোবাসতে চাও
তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?
অপরূপ বাগান
চলে গেলে- তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবো
আমার একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি।
জল নেমে গেলে ডাঙ্গা ধরে রাখে খড়কুটো, শালুকের ফুল :
নদীর প্রবাহ পলি, হয়তো জন্মের বীজ, অলঙ্কার- অনড় শামুক !
তুমি নেমে গেলে এই বক্ষতলে সমস্ত কি সত্যিই ফুরোবে ?
মুখের ভিতরে এই মলিন দাঁতের পংক্তি- তা হলে এ চোখ
মাথার খুলির নীচে নরম নির্জন এক অবিনাশী ফুল :
আমার আঙ্গুলগুলি, আমার আকাঙ্ক্ষাগুলি, অভিলাষগুলি ?
জানি কিছু চিরকাল ভাস্বর উজ্জ্বল থাকে, চির অমলিন !
তুমি চলে গেলে তবু থাকবে আমার তুমি, চিরায়ত তুমি !
অনুপস্থিতি হবে আমার একলা ঘর, আমার বসতি !
ফিরে যাবো সংগোপনে, জানবে না, চিনবে না কেউ;
উঠানে জন্মাবো কিছু হাহাকার, অনিদ্রার গান-
আর লোকে দেখে ভাববে- বিরহবাগান ঐ উঠানে তো বেশ মানিয়েছে !