What is the disabled children, you must know, be aware, should be aware?
প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
অনেক দিন হতে এই বিষয়ে একটা লিখা লিখার জন্য মনে মনে তাগিদ অনুভব করছি। তাই পড়াশুনা করছিলাম এই বিষয় নিয়ে। তারই ফলশ্রুতিতে এই লিখা। পড়বেন এবং সচেতন হবেন এবং অপরকে সচেতন করবেন এই আমার কাম্য।
![]() |
What is the disabled children you must know, be aware, should be aware? |
প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে নাকি তা খেয়াল করা বাবা-মায়ের জরুরি দায়িত্ব। এখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের কথাই বলা হচ্ছে। যে সকল শিশুর প্রতিবন্ধী হয়ে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে তা আগে থেকেই বোঝা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সাধারণত অভিভাবকেরা এ ধরনের সমস্যা বুঝতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলেন।
এখানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার লক্ষগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করা যায়। আর আপনাদের করণীয় প্রসঙ্গেও দিয়েছেন পরামর্শ।
১. শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। স্বাভাবিক বিকাশের ধীর গতি প্রতিবন্ধী শিশুর সবচেয়ে বড় লক্ষণ। তাই শিশুর আবেগ, সামাজিক এবং অন্যান্য সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক কার্যকলাপ বোঝার চেষ্টা করুন। বয়স অনুযায়ী তার মানসিক বিকাশ হচ্ছে না বলে মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. অনেকেই শিশুর মধ্যে ধীর মানসিক বিকাশ লক্ষ্য করার পরও ভাবেন হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আরো কিছু দিন অপেক্ষার পক্ষপাতী তারা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিলে শিশুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত।
৩. প্রত্যেক শিশু বিশেষজ্ঞই বলেন, শিশুর সামান্যতম সমস্যা হলে তার বাবা-মা সবার আগে বুঝতে পারেন। তাই অভিভাবকদের নিজের উপলব্ধির ওপর ভরসা করতে বলেন তিনি। শিশুর আচরণ ও মানসিক বিকাশ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এ জন্যে একটুও সময় নষ্ট না করলে ভালো আপনারই হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবন্ধী শিশুরা কি - জানতে হবে, জানাতে হবে, হতে হবে সচেতন ? What is the disabled children, you must know, be aware, should be aware?
পাঠ-১ প্রতিবন্ধী শিশু
একটি সুস্থ শিশু সকলেরই কাম্য। পরিবারে এমন কিছু শিশু দেখা যায় যাদের শারিরীক গঠন স্বাভাবিক নয়, হাত বা পা নাই। কানে শোনে না। ফলে কথা বলতে পারে না। অনেকে চোখে দেখে না বা কম দেখে। বুদ্ধিমত্তা কম, ফলে সামাজিক আচরণ ও ভাব বিনিময় ঠিকমতো করতে পারে না। এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। এই প্রতিবন্ধী শিশুরা আমাদের সমাজেরই একজন, তাই এদের সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে ধারনা থাকলে তাদের প্রতি সবার ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে, প্রতিবন্ধী শিশুটিও নিজেকে সকলের থেকে আলাদা বা অসহায় মনে করবে না।
>>প্রতিবন্ধতার কারণঃ বিভিন্ন কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। যেমন-
১। জন্মের পূর্বকালীন কারণ, ২। শিশু জন্মের সময়ের কারণ, ৩। শিশু জন্মের পরবর্তী কারণ।
১। জন্মের পূর্বকালীন কারণঃ- শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ও গর্ভের পরিবেশ শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে। গর্ভাবস্থায় নানা কারনে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত হতে পারে এবং প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
কারণগুলো হচ্ছে -
(ক) মায়ের রোগসমূহঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা যদি জার্মানহাম, চিকেনপক্স, মাম্পস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, রুবেলা ভাইরাস, এইডস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশুর উপর তার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। এর ফলে শিশু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা প্রভৃতি শারীরিক অবস্থায় গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
(খ) মায়ের অপুষ্টিঃ গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘদিন যাবৎ রক্তাল্পতায় ভোগেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খান তবে ভ্রুনের গঠনগত বিকলাঙ্গড় দেখা দেয়, মস্তিস্কের বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হয়।
(গ) ঔষধ গ্রহণঃ গর্ভাবস্থায় মা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খায়, তা শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক ঔষধ ভ্রুনের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাঁধার সৃষ্টি করে ফলে শিশু যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।
(ঘ) মায়ের বয়সঃ গর্ভধারনের সময় মায়ের বয়স কম বা বেশি দুটিই শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ। অপরিণত বয়সে প্রজণন অঙ্গের বিকাশ সম্পূর্ণ হয় না। তাই অপরিণত বয়সে মা হলে ত্র“টিপূর্ণ শিশু জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বেশি বয়সে অন্ত:ক্ষরা গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যাবলি হ্রাস পায়। তাই ৩৫ বৎসরের পর যে সব মহিলা প্রথম সন্তান জন্ম দেন, সে সব শিশু প্রতিবন্ধী হওেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
(ঙ) ঘণ ঘণ খিঁচুনিঃ গর্ভাবস্থায় মা যদি ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটে ও তার মস্তিস্কের ক্ষতি করে। ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
(চ) নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহঃ আপন মামাত, খালাত, ফুফাত, চাচাত ভাইবোন যাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক আছে তাদের মধ্যে বিবাহ হলে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(ছ) তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রবেশঃ গর্ভাবস্থায় বিশেষত প্রথম তিন মাস এক্স-রে বা অন্য কোনো ভাবে মায়ের দেহে যদি তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রবেশ করে তবে গর্ভস্থ ভ্রুণের নার্ভতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।
(জ) মা বাবার রক্তের Rh উপাদানঃ মা যদি Rh পজেটিভ আর বাবা যদি Rh নেগেটিভ হয় তা হলে গর্ভস্থ সন্তানের Rh পজেটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে। মা ও সন্তানের Rh উপাদানের মধ্যে যদি মিল না থাকে তবে তাকে Rh অসংগতা Rh Incompatiability বলা হয়। এতে মৃত সন্তান হয়। আর যদি শিশু বেঁচে যায় তাহলে পক্ষাঘাতগ্রস্থ বা মস্তিস্কের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়।
২। শিশু জন্মের সময়ের কারণসমূহঃ-
(ক) শিশুর জন্ম সময়কাল দীর্ঘ হলে, শিশুর গলায় নাড়ি পেচানোর কারণে বা শিশু জন্মের পর পরই শ্বাস নিতে অক্ষম হলে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য মস্তিস্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(খ) জন্মের সময় মস্তিস্কে কোনো আঘাত, যেমন- পরে যাওয়া বা মাথায় চাপা লাগা ইত্যাদি প্রতিবন্ধিতার কারণ হতে পারে।
৩। শিশু জন্মের পরবর্তী কারণসমূহঃ-
(ক) নবজাতক যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয় এবং রক্তে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তবে মস্তিস্কে কোষের ক্ষতি হয় এবয় শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।
(খ) শৈশবে শিশু যদি হঠাৎ করে পরে যায়, মস্তিস্কে আঘাত পায় বা শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
(গ) পরিবেশের বিষাক্ত পদার্থ, যেমন- পোকা মাকর ধ্বংস করার রাসায়নিক পদার্থ, ফ্লোরাইড, আর্সেনিক মিশ্রিত পানি ইত্যাদি শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(ঘ) শিশুর শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিকর উপাদানের প্রয়োজন হয়। পুষ্টিকর উপাদানের অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যহত হয় এবং শিশু মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
পাঠ-২ প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ
শিশু জন্ম গ্রহনের পর পরই যদি প্রতিবন্ধীতা শনাক্ত করা যায় তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীতা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। যেমন- জন্ম গ্রহণের পরই যদি বোঝা যায় শিশুর হাত বা পা বাকানো তবে অনেক সময় ব্যান্ডেজ বা সামান্য ব্যায়ামের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। দেরি হয়ে গেলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় যা কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় বহুল। অতি শৈশবে শিশু মধ্যে নিচের উল্লেখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে বুঝতে হবে শিশুর মধ্যে প্রতিবন্ধীতার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
(ক) শারীরিক প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণঃ বেশিরভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধীতা শিশু জন্মের পর চোখে দেখেই বোঝা যায়। আবার কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে প্রকাশ পায়।
(খ) ঠোঁট কাটাঃ উপরের ঠোঁট ঠিকমতো গঠিত হয় না। ঠোঁটে ফাঁকা থাকে। ফলে শিশুর খাদ্য গ্রহণে ও কথা বলতে সমস্যা হয়।
(গ) কাটা তালুঃ মুখের ভিতরের উপরের দিকে তালুর হাড় ও মাংসপেশী ঠিকমতো গঠিত হয় না। ফলে খাদ্য গ্রহণ, কথা বলাা এবং শোনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।
(ঘ) মুগুর পাঃ একটি বা উভয় পা ভিতর বা পিছন দিকে বাঁকানো থাকে।
(ঙ) স্পাইনা বিফিটাঃ মেরুদন্ডের হাড় (কশেরুকা) ঠিকমতো জোড়া লাগে না। ফলে মেরুরজ্জু পিঠের দিকে থলির মতো ফুলে উঠে। হাটাচলায় সমস্যা হয়।
(চ) সেরেব্রাল পলসিঃ জন্মের সময় শিশুকে অনেক সময় শিথিল বা নেতানো মনে হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে অন্য শিশুদের মতো হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারে না। মাথা তোলা, বসা ইত্যাদি খুব ধীর গতিতে হয়। দুধ চুষতে ও গিলতে অসুবিধা হয়।
(ছ) শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা গঠন বিকৃতিঃ শিশু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ- হাত পা, আঙ্গুল থাকে না বা গঠন অসম্পূর্ণ থাকে। দেহের গঠনও বিকৃত হতে পারে।
(জ) বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণঃ বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে এক ধরনের অক্ষমতা এবং এই অক্ষমতাটি স্থায়ী প্রকৃতির। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার কোনো চিকিৎসা নাই। তবে যত্ন শিক্ষণের মাধ্যমে অনেক শিশুর আচরণের উন্নয়ন ঘটানো যায়। তাই আমাদের উচিত দ্রুত সনাক্ত করে শিশুর যথাযথ যত্ন ও শিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচলণ করা। তবে সব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা একই ধরনের নয়। বুদ্ধাঙ্কের উপর ভিত্তি করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শনাক্ত করা যায়।
>>বুদ্ধাঙ্ক- বুদ্ধাঙ্ক হচ্ছে ব্যক্তির মানসিক বয়সের সাথে সময়ানুক্রমিক বয়স বা প্রকৃত বয়সের অনুপাত। @@বুদ্ধাঙ্ক (IQ) = মানসিক বয়স/ প্রকৃত বয়স X১০০ @@ওয়েলসার এবং টারম্যান নামে দুই জন মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধাঙ্কের উপর ভিত্তি করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা নির্ণয় করেছেন। এই ক্ষেত্রে উনারা আদর্শায়িত বুদ্ধি অভীক্ষা ব্যবহার করেন। এই অভীক্ষায় একজন পরীক্ষক কর্তৃক একজন পরীক্ষণ পাত্রের বুদ্ধি পরিমাপ করা হয়। এইক্ষেত্রে অভীক্ষার অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো হলো- স্মৃতিশক্তি (Short term memory), শব্দের ব্যবহার (Vocabulary), নৈব্যক্তিক যুক্তি (Abstract Reasoning) , সাধারন তথ্য (General Information), গানিতিক যুক্তি (Numerical Reasoning), পরিমাপক। প্রতিটি সঠিক উত্তরের নম্বর যোগ করে সাফল্যাঙ্ক গণনা করা হয়। পরে তা একটি আদর্শ নমুনার সাথে তুলনা করা হয়। অভীক্ষা গ্রহণের সময় পরীক্ষাণ পাত্রের সমবয়সী একটি বিরাট দলকে আদর্শ নমুনা হিসাবে নির্বাচন করে তাদের গড় মান নির্ধারণ করা হয়।
>>ওয়েলসারের বুদ্ধি অভীক্ষা অনুযায়ী বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার স্তরঃ-
১। মৃদু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্কে গড়ে ৭০-৫০ হয়। বিশেষ যতœ নিলে এরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
২। মধ্যম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্কগড়ে ৪৯-৩৫ হয়। এই ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের অনেকের ডাউন সিন্ডোম থাকে। অনেকের শারীরিক বৈকল্যও থাকতে পারে।
৩। গুরুতর মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্ক ৩৪-২০। এদের জন্মগ্রহণের পরপরই শনাক্ত করা যায়।
৪। চরম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্ক ২০ এর কম। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশুর শারীরিক ও অন্যান্য বৈকল্য থাকতে পারে।
>> নিম্নলিখিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখে সাধারণভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু শনাক্ত করা যায়।
(ক) হাঁটা, চলা, বসা, কথা বলা ইত্যাদি বিকাশগুলো বয়সের তুলনায় কম হয়।
(খ) কোনো বিষয়ে শিশু মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
(গ) কোনো নির্দেশনা সহজে বুঝতে পারে না। একই নির্দেশনা বারবার দিতে হয়।
(ঘ) শিশু কোনো কাজ করতে পারে না। এমনকি মল-মূত্র ত্যাগের শিখণও সহজে গ্রহণ করতে পারে না।
(ঙ) সুক্ষ্ম কোনো কাজ করতে পারে না। অবাঞ্চিত আচরণ করে।
(চ) সমবয়সীদের সাথে মিশতে পারে না। সামাজিক আচরণ ঠিকমতো প্রদর্শন করতে পারে না।
(ছ) ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যায় বা খিচুনি হয়।
### বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কিছু রোগ যা দেখে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা সহজে শনাক্ত করা যায়।
(ক) মাইক্রোসেফালিঃমাথার আকৃতি অস্বাভাবিক ছোট হয়। এরা গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়
(খ) হাইড্রোসেফালিঃ মাথার ভিতরে তরল পদার্থ জমে থাকে ফলে মাথার আকৃতি অস্বাভাবিক বড় হয়। এরাও গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(গ) ডাউন সিন্ডোমঃ গোলাকার মুখোমন্ডল, তীর্যক চোখ, চোখের পাতা পুরু হয়। জন্মের সময় শিশু দূর্বল ও শিথিল থাকে। হাত, পা ও ঘাড় খাটো হয়। উপুর হতে, বসতে ও হাটতে দেরী হয় এবং এরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(ঘ) ক্রিটিনিজমঃ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বিলম্ব হয়। শিশুর দেহে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন কম হয়। ফলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়- শিশু খুব ধীরে বেড়ে ওঠে। কপাল ছোট, মুখমন্ডল হাত-পা ফোলা এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা থাকে।
পাঠ-৩ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা ও শ্রবন প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ ও শিশু প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ
বাংলাদেশে দৃষ্টি ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর এই দুই প্রতিবন্ধী জন্ম নেবার পর পড়ে সনাক্ত করা সম্ভব যদি আমরা বাবা মারা একটু সচেতন হয়। চোখের ও কানের নিম্ন লিখিত অবস্থা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।প্রতিবন্ধিতার ধরন শনাক্ত এবং পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
>>দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ-
(ক) চোখের পাতা লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া। চোখের পাতার কিনারে শুষ্ক আস্তরণ।
(খ) চোখ থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া।
(গ) ঘন ঘন রগরানো ও চোখ কুচকানো।
(ঘ) বর্গ চিনতে ভুল করা। বর্ণ উল্টা দেখা।
(ঙ) লেখার সময় অসম ফাঁক দেয়া, সারি সোজা রাখতে না পারা।
(চ) কাছের বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া বা দেখতে না পারা।
>>শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা সনাক্তকরণ-
(ক) কানের গঠনগত ত্র“টি বা বিকৃতি থাকলে কান পাকা রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকা।
(খ) উচ্চারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সুবিধা বা কথা কম বলা।
(গ) কিছু শোনার সময় কানে হাত দিয়ে শোনার চেষ্টা করা। রেডিও, টিভি শোনার সময় শব্দ বাড়িয়ে দেয়া বা কাছে গিয়ে শোনা।
(ঘ) কোনো প্রশ্ন বারবার করা বা এক প্রশ্নের অন্য উত্তর দেয়া।
(ঙ) কথা না বলে হাত ও মুখ ভঙ্গিমার মাধ্যমে ইশারায় ভাব বিনিময় করা।
>>শিশু প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধঃ
প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিবেশী শিশু যাতে জন্মগ্রহণ না করে এবং শিশু জন্মগ্রহণের পর যাতে প্রতিবন্ধতার শিকার না হয় সে দিকে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।
এই জন্য যা করণীয় তা হচ্ছে-
>> গর্ভকালীন সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ--- গর্ভকালীন সময় মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া। পুষ্টিকর খাবার না খেলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু পূর্ণাঙ্গ সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে অথবা শিশু কম ওজনের হয়। এসব শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। প্রতিবন্ধীতা রোধে গর্ভকালীন সময়ের প্রথম মাসগুলোর পুষ্টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে আয়োডিন যুক্ত লবণ গ্রহণ শিশুর মানসিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ করে।
>> ঔষধ গ্রহণে সতর্কতা--- গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ ও মাদক, সিগারেট থেকে বিরত থাকরে কিছু কিছু জন্মত্রুটি এবং মানসিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
>> প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ--- বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা রোধ করতে হলে গর্ভধারনের আগে রুবেলা ভাইরাস বা জার্মান হাম প্রতিরোধক টিকা নিতে হবে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সকল মহিলাকে ধনুষ্টংকার থেকে রক্ষার জন্য টিটি টিকা দিতে হবে।
>> শিশু কিশোরকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া--- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে শিশুদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। শিশুদের গাঢ় সবুজ রং এর শাক সবজি, হলুদ ফলমূল খাওয়ালে এই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। জন্মগ্রহণের পর পরই মায়ের প্রথম দুধ শিশুকে দিতে হবে এই দুধে কলেস্ট্রাম নামক হলুদ বর্ণের পদার্থ থাকে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
>> স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা--- ঘন বসতি ও অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গুরুতর প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
>> বেশি বয়সে সন্তান ধারণ রোধ--- বেশি বয়সে সন্তান গ্রহণ বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার অন্যতম কারণ। তাই বেশি বয়সে সন্তান ধারণ নিরুৎসাহিত করতে হবে।
>> রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ রোধ--- ঘনিষ্ট রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ বন্ধ রোধ করতে পারলে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
>> আঘাত ও রোগ সংক্রমণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ--- শিশুর কানে, চোখে, মাথায় আঘাত বা রোগ সংক্রমণ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
>> রাসায়নিক পদাথ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন--- পোকা মাকড় ধ্বংস করার জন্য যে সব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ। সমাজের অনেক লোকই বিভিন্ন ঝুঁকি ও পূর্ব সতর্কতামূলক ধারনা না নিয়েই সরাসরি ক্ষেতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পোকা-মাকড় নিধন করে। এর ফলে অনেকে দৃষ্টিহীন, পক্ষাঘাতগ্রস্থতার শিকার হয়।
>> বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশ--- আমাদের দেশের অনেক শিশু বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে। যদিও দেশের শ্রম আইনে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয় ফলে আগুনে পুড়ে যাওয়া, অঙ্গ হানি, দৃষ্টিহানি হয়। মেরুদন্ডে আঘাত বা মাথায় পেয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়।
শেষ কথাঃ যে পরিবারে একজন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে সে পরিবারের সদস্য বিশেষ করে বাবা-মায়ের জন্য প্রয়োজন বিশেষ সেবা-পরামর্শ। তারা যেন প্রতিবন্ধী শিশুটিকে নিজেদের বোঝা মনে না করেন অথবা শিশুর প্রতিবন্ধিতা লুকিয়ে না রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও বিশেষায়িত স্কুলের সাহায্য গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সকলেরই সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের দেশেও এখন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে, আসুন আমরা সকলেই সচেতন হই- এগিয়ে আসি এই একটু পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে।