![]() |
একাকিত্ব |
মাজে মাজে মনে হয় হারিয়ে যাই। স্রেফ চারপাশের মানুষগুলো থেকে চলে যাই। তাদের জানাবো না এই বুকে অনেক স্বপ্ন ছিলো কোনদিন। এই বুকের ভেতরে কেবল পৃথিবীকে সুন্দর করার আর সবাইকে ভালোবাসার ইচ্ছে ছিলো। আমি জানি আমার এই কথাগুলো কেউ বিশ্বাস করবেনা। না করুক। তাইতো এই পাতায় করে আমার স্বপ্ন আঁকি। একদিন আমি থাকবো না– কিন্তু আমার বুকে আর্তিগুলো এই অক্ষরে করে ছেপে থাকবে সভ্যতার ধ্বংসের দিন অবধি। একদিন নিশ্চয়ই সমস্ত ওয়েবসার্ভাররা ধ্বংস হয়ে যাবে — যেদিন আর কেউ কোন ব্রাউজারে ঢুকে ইউ আর এল হিসেবে কিছু চাপতে পারবে না। তার আগে তো আমি নিশ্চিত হারিয়ে যাবো। চলে যাবো আমার স্রষ্টার কাছে। যার অপার ভালোবাসায় আমি সৃষ্টি হয়েছিলাম। কিন্তু মনে হয়, আমি ধরে রাখতে পারিনি তার ভালবাসা আমার উপর।
“বড় একেলা লাগছে আজ”
“অসহায় হয়ে গেলাম আজ”
যখন এই শব্দগুলো লিখছি অভ্র চালু করে কীবোর্ড চেপে। তখন আমার মাথার চিন্তা, বুকের অনুভূতি আর আঙ্গুলগুলোর ব্যাপক ভালোবাসা মিলেমিশে সৃষ্টি করছে স্ক্রীনের উপরে ভেসে থাকা একেকটি শব্দ। আমি বুঝি এই শব্দগুলোকে আমারই ভালোবাসার ছায়া। আমাকে আর কেউ না ভালোবাসুক, আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি গাফুরুল ওয়াদুদ [ক্ষমাশীল ও প্রেমময়] তিনি অবশ্যই আমাকে অনেক ভালোবাসেন। হারিয়ে গেলে তার কাছেই যাবো।
এই জগতের মাঝে আমি বেঁচে থাকি থাকতে হয় বলে। আমি হয়ত বাস্তববাদীদের মতন অনেককিছু করার মতন নই। আমি সবকিছুতে থেকেও নেই। আমি আসলে কোন মানুষের আপন হবার মতনও নই। আমি তো জানিনা কী করে আপন হয়। আমিও তাই অমন করে সবার কাছ থেকে হারিয়ে যাই –যারা থেকেও নেই, যারা থেকেও থাকেনা। কাছেপিঠে যাদের পেতাম, হঠাতই একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি তারা দূরে চলে গেছে। যারা চলে যায় তাদের কাছে অনেক যুক্তি থাকে, একগাদা ব্যাকরণ আর সরল অংক কষে তারা হিসেব করেন চাওয়া-পাওয়ার। আমি আগের মতই স্রোতের সাথে ভেসে চলি। নদীর স্রোতে ভেসে থাকা একটা টুকরা পাতার মতই মনে হয় নিজেকে… ভেসে যেতে যেতে দেখি পাড়ের দুখী আবুল হোসেনকে, আর জাহানারা বেগমকে –যাদের সর্বস্ব চলে গেছে কোন এক দানবের পাকস্থলিতে। আর হঠাৎ চোখে পড়ে সামনের অট্টালিকা, যার বারান্দায় আমার খুব পরিচিত একজনরে ছায়া দেখতে পাই... না সে তো তুমি নও... মৃত মানুষ তো আর জীবিত হতে পারে না... এত আমার চোখের ভূল... না হয়ত তোমার কিছুটা ওর মত... তবু সে বারান্দায় দাঁড়ানো মেয়েটিকে দেখি... তার হাসি, তার দুষ্টামি দেখতে ভাল লাগে... বারান্দায় অর্পিতা অঙ্গনা খোলা চুলে হাতে একটা গল্পের বই আর এদিক সেদিক তাকিয়ে দুপুরের “বোরনেস” দূর করছে… জীবন তো অমনই হয়! তাকে দেখে হারিয়ে যাওয়া অতীতের পাতা থেকে অনেক সুখময় স্মৃতি গুলো ভেসে উঠে হৃদয়ের মাঝে; কিছু সময়ের জন্য হলেও এ অভিশপ্ত জীবনের দুঃখ, তাকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা গুলো বিশাল আকাশের ওই নীল মেঘের মাঝে কোথাও হারিয়ে যায়। কিন্তু জানি তা আসলে সবই আমার কল্পনা, বাস্তব খুব কঠিন, আমার বাস্তব তো তার মতই অন্ধকার, সে তো আমায় এ অভিশপ্ত জীবন দিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।
এই তীব্র হিসেব-নিকেশের বেড়াজাল থেকে বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছে করে কারন কিছু ভাল কাজ করে যেন এ মায়ার দুনিয়া ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার কছে যেতে পারি! এতগুলো বছর যখন পারছি, আগামীতে পারবো না? জানিনা আমি। এই অসংজ্ঞায়িত বিচিত্রতার তীর আমাকে যেন বিদ্ধ না করে– সেই প্রার্থনা আমার রবের কাছে করি। যার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সিকি শতাব্দী পেরিয়ে গেছে আমার জীবনের। যেন আরো আরো ভালোবাসতে পারি তাকে, যেন কাছাকাছি চলে আসা অনন্ত জগতের একাকীত্ব তার ভালোবাসার ঝর্ণাধারায় ভিজে দূর হয়ে যায়। হারিয়েই যাই, হারিয়েই যাক, যে যেখানেই চলে যাক না কেন — আমার আরাধ্য ওই অনন্ত জগত। অন্যের কাছে বিবেচিত হতে যেতে যেতে ক্লেদে ভারী হয়ে যায় বুক। তাই সকাল বিকেলের ৫ বার স্মরণে ক্লেদমুক্তি ঘটুক অপার সৌন্দর্যে। প্রার্থনাতেই তো অনুভব করি মুক্তি, হারানোর মুক্তি!
আমার এ একাকিত্বই তোমাকে জীবিত রেখেছে আমার মনের মাঝে, এটাই অনেক আমার আছে। আমার এ একাকিত্বই আমার মত মানুষের জীবনের চালিকা শক্তি, নাইবা হল সবার মত আমার এ জীবন।