পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

পর্দা শিক্ষা

১. পর্দা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের নিদর্শন

পর্দা মহান আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আনুগত্যের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন:

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهٗ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا ــ


আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সেই বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আহযাব: আয়াত-৩৬)

পর্দা কোনো মামুলি সংস্কৃতি নয়; পর্দা আল্লাহর আদেশ। এটা আরব, মিশর, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আমেরিকার সাদা-কালো কারও জন্য এককভাবে নির্দিষ্ট কোনো শর্ত নয়। সমগ্র মুসলিম জাহানের সকল নারী ও পুরুষের মর্যাদা ও হেফাজতের শর্ত হিসেবে কুরআন ও হাদীসে পর্দার হুকুম দেয়া হয়েছে।

২. পর্দা শালীনতা ও ভদ্রতার প্রতীক
পর্দার বিধান এক ধরনের ভদ্রতাও বটে। ভদ্রতা বলতে আমরা বুঝি শালীন চাল-চলন ও আচার-আচরনকে। আর পর্দার মধ্য দিয়ে সে দিকটি পালন করা হয় বলে পর্দাকে ভদ্রতা বলা হয়েছে। সতীত্ব ও ভদ্রতা বজায় রেখে চলার জন্যে আল্লাহ তায়ালা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন।

৩. পর্দা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ
পর্দা ঈমানের পরিচায়ক। ঈমানদারদের অন্যতম গুণ হল তারা পর্দা রক্ষা করে চলে। বনু তামিম গোত্রের কিছু মহিলা পাতলা কাপড় পরিধান করে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর সাথে দেখা করতে আসলে তিনি তাদের বলেন যে, তারা যদি অনুগত বিশ্বাসী (মুমিন) নারী হয় তবে তাদের এসব পাতলা পোশাক পরিত্যাগ করে চলা উচিত। আর তারা যদি বিশ্বাসী মুমিনা না হয় তাহলে উপভোগের প্রয়োজনে ঐসব পোশাক পরতে পারে।

৪. পর্দা তাকওয়ার পরিচায়ক
মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন:

              يَا بَنِيَ اٰدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِى سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ     

হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি। তোমাদের দেহের আবরণ ও সাজসজ্জার বস্তু হিসেবে এবং তাক্বওয়া বা পরহেজগারীর পোশাক সর্বোত্তম। (সূরা আরাফ: আয়াত-২৬)

অতি সহজে পরিধেয় এমন সহজলভ্য পোশাকের প্রচলন হয়েছে আজকের দুনিয়ায়, যাকে পর্দা বলে আখ্যায়িত করা যায় না। কিন্তু বিশ্বাসী মহিলারা আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার মতো পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করেন, এটা তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং বুঝা গেল, পর্দা তাক্বওয়া অর্জনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম।

৫. পর্দা আত্মমর্যাদার প্রতীক
ইসলাম যদি পর্দার বিধান নাও দিত, তবু আত্মমর্যাদাবোধ বলেতো একটা কথা আছে। পুরুষের তো স্বাভাবিকভাবেই এ আত্মমর্যাদাবোধ থাকা উচিত যে, যেন তার স্ত্রী কন্যাকে অন্য কোনো লোক দেখতে না পারে। পর্দা আত্মমর্যাদার স্বাভাবিক আবরণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিজ স্ত্রী অথবা মেয়ের প্রতি অন্য কারও তাকানোকে কোনো পুুরুষ সহজভাবে নিতে পারেন না এবং পছন্দ করেন না। আপনজনের প্রতি অন্যের দৃষ্টিপাত আত্মমর্যাদার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।

৬. পর্দা আত্মরক্ষার হাতিয়ার
পর্দা মহান আল্লাহর নিকট থেকে একটা বিরাট নিয়ামত এবং আত্মরক্ষার বড় হাতিয়ার। পর্দা নারী-পুরুষকে বড় বড় পাপ কাজ থেকে রক্ষা করে। কারণ মানুষ যখন বিপদের আশংকা করে, তখন সে স্বভাবতই নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। আত্মগোপন করে থাকলে মানুষ নানান বিপদ থেকে বেঁচে যায়। আর পর্দা হচ্ছে আত্মগোপনীয়তার মতই। পর্দা নারী-পুরুষকে অনেক বিপদ হতে হেফাজত করে।

৭. পর্দা ব্যক্তির গোপনীয়তার রক্ষক
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

اِنَّ اللهَ سِتِّيْرٌ يُحِبُّ السِّتْرَ               ـ

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা গোপনীয় (লজ্জাশীল)। কাজেই তিনি লজ্জাশীলতা অর্থাৎ পর্দাকে ভালোবাসেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকী, হাদীস নং-১৩৫৫৯)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন: যে মহিলা তার ঘরের লোক ব্যতীত অন্যের নিকট তার কাপড় উম্মোচন করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে বেপর্দা করে দেন। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং: ১১৪)